জরুরি সময়ে হাতে টাকা থাকে না? এই টিপস গুলো মেনে চললে কারো কাছে হাত পাততে হবেনা!

জীবনে কখন কী ঘটে যাবে আমরা জানি না। হঠাৎ জরুরি পরিস্থিতিতে টাকা দরকার হলে কী করবেন? আজকের টপিক শিখবেন কীভাবে ধীরে ধীরে একটি ইমার্জেন্সি ফান্ড তৈরি করতে হয় যা আপনাকে ভবিষ্যতের আর্থিক সমস্যাগুলো থেকে বাঁচাবে।





কিভাবে ইমার্জেন্সি ফান্ড তৈরি করবেন?

জীবনে অনেক সময় হঠাৎ করে জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়—চাকরি চলে যেতে পারে, বড় কোনো অসুস্থতা হতে পারে, বা অন্য যে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে পারে। এই ধরনের মুহূর্তগুলোতে আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আপনার একটি "ইমার্জেন্সি ফান্ড" থাকা জরুরি। কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারেন না কীভাবে এই ফান্ড গড়ে তুলতে হবে। তাই আজকে আমি শেয়ার করবো ধাপে ধাপে ইমার্জেন্সি ফান্ড তৈরির সহজ পদ্ধতি।


১. প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন


ইমার্জেন্সি ফান্ডের লক্ষ্য ঠিক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কত টাকা আপনার এই ফান্ডে জমা রাখা দরকার তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত, ৩ থেকে ৬ মাসের দৈনন্দিন খরচের সমপরিমাণ টাকা আপনার ফান্ডে থাকা উচিত।


কীভাবে করবেন:

প্রথমে আপনার মাসিক খরচের হিসাব বের করুন। এর মধ্যে বাড়িভাড়া, খাবার, যাতায়াত, ঋণ পরিশোধ, ইত্যাদি খরচগুলো নিয়ে বিবেচনা করুন। এবার সেই পরিমাণ টাকার তিন থেকে ছয় মাসের হিসাব করুন। এটিই হবে আপনার ইমার্জেন্সি ফান্ডের লক্ষ্যমাত্রা।




২. সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়ে তুলুন

ইমার্জেন্সি ফান্ড গড়ে তোলার জন্য আপনাকে সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একবারে বড় অঙ্কের টাকা জমা করার চিন্তা না করে, ছোট অঙ্কে শুরু করুন।

কীভাবে করবেন:

প্রতিমাসে আপনার আয়ের একটি ছোট অংশ সরিয়ে রাখুন, যেমন ৫% বা ১০%। ছোট ছোট সঞ্চয় দিয়েই আপনার ফান্ড ধীরে ধীরে বড় হবে। প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য রাখুন, প্রথম ১০,০০০ বা ২০,০০০ টাকা জমা করার দিকে। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে এটা অনেক সহজ লাগবে।


৩. অপ্রয়োজনীয় খরচ কমান


প্রয়োজনের বাইরে যে খরচগুলো করছেন সেগুলো কমিয়ে ফেললে ইমার্জেন্সি ফান্ড আরও দ্রুত তৈরি করা সম্ভব।

কীভাবে করবেন:


আপনার দৈনন্দিন খরচগুলোর দিকে একবার নজর দিন। যেমন, বাইরে খাওয়া, অনলাইন শপিং, বা বিনোদনের খরচ কমিয়ে দিন। অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো বাদ দিয়ে সেই টাকাটা ইমার্জেন্সি ফান্ডে জমা দিন। আপনি চাইলে বাজেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে খরচের হিসাব রাখতেও পারেন।




৪. অপ্রত্যাশিত আয় কাজে লাগান

অনেক সময় আমরা হঠাৎ করে বোনাস পাই, কোনো উপহার বা অতিরিক্ত আয় হয়। এই টাকাগুলোও ইমার্জেন্সি ফান্ডে জমা করলে ফান্ডটি দ্রুত বড় হবে।

কীভাবে করবেন:

বোনাস, ট্যাক্স রিফান্ড, বা কোনো উপহারের টাকা খরচ না করে সরাসরি ইমার্জেন্সি ফান্ডে জমা দিন। এতে করে আপনি একবারে ভালো অঙ্কের টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন এবং আপনার ফান্ড আরও দ্রুত বাড়বে।


৫. স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় পদ্ধতি চালু করুন

প্রতিদিনের ব্যস্ততায় আমরা অনেক সময় সঞ্চয়ের কথা ভুলে যাই। তাই স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় একটি ভালো উপায় হতে পারে, যাতে সঞ্চয় বাধাগ্রস্ত না হয়।

কীভাবে করবেন:

আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় সিস্টেম চালু করুন। এতে মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে আপনার আয়ের একটি অংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমার্জেন্সি ফান্ডে জমা হবে। আপনার প্রতিদিনের খরচের সাথে এটাকে মেশাবেন না, যাতে আলাদা থাকে এবং খরচ করার হাত থেকে রক্ষা পায়।


৬. ইমার্জেন্সি ফান্ড সহজে তুলতে পারেন এমন জায়গায় রাখুন

ইমার্জেন্সি ফান্ডের উদ্দেশ্যই হলো জরুরি মুহূর্তে ব্যবহার করা। তাই এই ফান্ড এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে দরকার হলে সহজেই টাকা তুলতে পারবেন।

কীভাবে করবেন:

ফান্ডটি এমন কোনো সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখুন যেখানে সহজে টাকা তুলতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখুন, এই ফান্ড যেন অন্য খরচের জন্য ব্যবহার না হয়। আলাদা একটি অ্যাকাউন্টে রাখলে সেটি সুরক্ষিত থাকবে এবং আপনি যখনই দরকার হবে, তখনই সহজে ফান্ডে হাত দিতে পারবেন।




৭. জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফান্ডে হাত দেবেন না

ইমার্জেন্সি ফান্ড জরুরি মুহূর্তের জন্য। তাই আপনার ফান্ডটি এমন সময়েই ব্যবহার করুন, যখন সত্যিই জরুরি পরিস্থিতি আসে। সাধারণ খরচের জন্য এই ফান্ডে হাত দিলে দীর্ঘমেয়াদে আপনি বিপদে পড়তে পারেন।

কীভাবে করবেন:

ফান্ডকে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত রাখুন এবং শুধুমাত্র বড় ধরনের জরুরি প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, চাকরি হারানো, বড় কোনো অসুস্থতা বা ঘরবাড়ি বা গাড়ির জরুরি মেরামতের মতো পরিস্থিতিতে।


ইমার্জেন্সি ফান্ড গড়ে তোলা মানে আপনি আপনার ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। এটি ধীরে ধীরে তৈরি করুন, তবে একবার শুরু করলে দেখবেন কত দ্রুত একটি ভালো পরিমাণ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকেই অল্প অল্প করে শুরু করুন, আপনার খরচের দিকে নজর দিন এবং ফান্ডে নিয়মিত টাকা জমা দিন।


নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম